পর্নোগ্রাফির পটভূমি ! পর্ন আসক্তি ও প্রতিকার !

২৩ জানুয়ারি ১৯৮৯ আমেরিকার ফ্লোরিডা স্টেট জেলখানায় মৃত্যুর প্রহর গুনছে এক ভয়ংকর নরপিশাদ নাম টেট বান্ডি।




নিজের মুখে অন্তত ৩০জন নারীকে ধর্ষণের পর খুনের কথা শিকার স্বীকার করেছে সে মৃত্যুদণ্ডেরও আদেশ হয়েছে তার জীবনের অন্তিম মুহূর্তে এসে দাঁড়ানো এই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলারের এক বিশেষ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয় সেদিন।


প্রায় আধ ঘন্টা ধরে নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে একপর্যায়ে এসে সে দাবি করে তার বিকৃত সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসির শুরুটা ভায়োলেন্স পর্নোগ্রাফি এর হাত ধরে।


পর্নোগ্রাফি মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে তার প্রথম সতর্কবাণী সম্ভবত বিশ্ব বাসি পাই এই সাক্ষাৎকার এর মাধ্যমে।


পরেরদিন ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে বান্ডির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। জীবন অবসান ঘটে আমেরিকার ইতিহাসের সবচাইতে আলোচিত এই সিরিয়াল কিলারের।


পর্নোগ্রাফি আজকের যুগের বহুল আলোচিত সমালোচিত ও বিতর্কিত একটা টপিক, এর মরণ নেশার ছোবলে আক্রান্ত বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ।


বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ যেন ডুবে আছে এর অতল পঙ্কিল গ্রহ পড়ে পর্ন দেখা ভালো নয় এটি সবাই জানে।


কিন্তু কেন ভালো নয়? 

এর ক্ষতিকর দিক কি কি?

পর্নোগ্রাফি আসক্তি আমাদের সমাজকে কোন দিকে নিয়ে যাচ্ছে?


এগুলো নিয়ে বিশদ আলাপ না করে শুধু ভালো নয় ভালো নয় বলে মুখে ফেনা তুলে ফেললেও কাজের কাজ কিছুই হবে না।


কারণ এ এমনই এক ভয়াল নেশা চরম পরিণতি সম্পর্কে না জানলে এটি পরিত্যক্ত করা সহজ নয়। পর্নোগ্রাফির আসক্তির ক্ষতিকার দিক এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে ই আমাদের আজকের আয়োজন।


পর্ন আর বাস্তব জীবনের সেক্স এই দুটির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ পর্নে যা দেখানো হয় তা অনেক অংশে মিথ্যা অভিনয় ছাড়া আর কিছুই নয়।


The difference between watching pornography and real life? 

পর্নোগ্রাফির সাথে বাস্তব জীবনের কোন মিল আছে?

উদাহরণ দেখুন।

একজন পুরুষ প্রায় ঘন্টাখানেক ধরে একজন নারীর সঙ্গে সেক্স করছে! অথচ বাস্তবতা হলো সেক্সের শুরু থেকে পুরুষের বীর্যপাতের গড় সময়টা ৫ থেকে ৭ মিনিট হয়ে থাকে! কারো কারো ক্ষেত্রে কিছু কম বেশি হতেই পারে অনেক ফ্যাক্টর কাজ করে এখানে তবে গড় হিসাবে এটাই।


তো এবার চিন্তা করুন-

সারা জীবনে পর্নোগ্রাফিতে দেখে আসলেন ঘণ্টার পর ঘন্টা ধরে সেক্স চলছে আর নিজের বেলায় দেখলেন ৫ মিনিটেই খেল খতম! সেলফ কনফিডেন্ট কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তখন?


আপনার সঙ্গিনী যদি পর্ন ভিডিও দেখে ভেবেই বসেন অমন দীর্ঘ সময় ধরে সেক্স করাই নরমাল তাহলে তো আর কথা নেই।


এখন হয়তো মনে হচ্ছে ও সব যে মিথ্যে অভিনয় সেটা তো সবাই জানে? আচ্ছা মেনে নিলাম পরের পয়েন্টে আসি।


নিয়মিত পর্ন দেখার ফলে সবচেয়ে বড় ক্ষতি টা হয় নরমালাইজেশন এর মাধ্যমে, ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলা যাক?

ধরুন আপনার আশপাশের প্রায় সবাই ধূমপান করে আপনি যদিও জানেন ধূমপান করা ভালো কিছু নয় তবু একটা সময় পর আপনার অবচেতন মন ধূমপানের ব্যাপারে সাই দেবে ঠিক ই! কারণ প্রতিনিয়ত দেখতে দেখতে কাজটা কে ডাল ভাত বানিয়ে ফেলেছেন আপনি।


এভাবে নরমালাইজেশন এর ফলে অন্যায়কে অন্যায় মনে না হওয়া! ক্ষতিকর কোন কিছুর ক্ষতিকর দিক চোখের সামনে থাকার পরও বুঝতে না পারা এসব মানুষের অস্থিমজ্জায় মিশে আছে।


তো এই একই ব্যাপার ঘটে পর্নআসক্তির ক্ষেত্রেও এখানে মেয়েদেরকে উপস্থাপন করা হয় কোকো পণ্যের মত যেন চাইলেই যে কাউকে বিছানায় নিয়ে যাওয়া যায়।


অনেক ক্ষেত্রে দেখানো হয় কন্সেন্ট ছাড়াই জোরপূর্বক সেক্স করার পরও নারীটি খুশি কিন্তু বাস্তবতা কি এমন? নিশ্চয়ই নিশ্চয়ই না।

ভিডিওতে একের পর এক আঘাত করা হচ্ছে নারীর শরীরে তার ওপর ভায়োলেন্স চালানো হচ্ছে আবার নারীটা সেটি উপভোগও করছে! তাতে আনন্দ ও পাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবেও কি তা ঘটে?


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি দাতব্য সংস্থা প্রায় ৪০০০ পর্ন ভিডিওর ওপর একটি সমীক্ষা চালাই তাতে দেখা যায় ৩৫ থেকে ৪৫ শতাংশ পর্ন ভিডিওতে নারীর উপর নির্যাতন চালানো হয়! এমন সব সেক্সুয়াল ফ্যান্টাসি দেখানো হয় যা বাস্তব জীবনে করতে যাওয়া মাত্রই বিপদ ডেকে আনা।


কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের তরুণ সমাজের একটা বড় অংশে সেক্স সম্পর্কিত জ্ঞান এই পর্নোগ্রাফিতেই সীমাবদ্ধ! প্রতিনিয়ত এখানে যা দেখছে তা সাধারণ ব্যাপার বলে ধরে নিচ্ছে সেগুলোকে।


ভায়োলেন্স কে আর ভায়োলেন্সি মনে হচ্ছে না বিকৃত অশ্লীল ফ্যান্টাসি কে মনে হচ্ছে একদম স্বাভাবিক! এভাবে পুরো সেক্স ব্যাপারটাকে নিয়েই ভুলে ভরা এক অলীক জগতে আটকে যায় তারা।


এই ভুল কনসেপ্টগুলোকে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে গেলেই ঘটে বিপত্তি, শুরু হয় সঙ্গীর সাথে মলি মালিন্য ভুল বোঝাবুঝি কোন কোন ক্ষেত্রে সেটি বিচ্ছেদ পর্যন্ত ও গড়ায়।


অথচ আপনার সঙ্গী পর্নস্টার নয়, পর্দায় যেটি দেখেন বাস্তবতা কিন্তু তেমন নয়।


Is love just sex? ভালোবাসা কি শুধুই সেক্স?

ভালোবাসা! 

দুজন নারী পুরুষের মধ্যে গড়ে ওঠা এক অদ্ভুত রসায়ন! যার সঙ্গে তুলনীয় আর কিছুই নেই হয়তো ভালোবাসা আছে বলেই আজ পৃথিবী এত সুন্দর।

ভালোবাসা আছে বলেই রক্তের সম্পর্ক না থাকার পরও জীবনসঙ্গীকে নিয়ে আমাদের এত ভাবনা এত আয়োজন।


এই ভালোবাসার সঙ্গে সেক্সের সম্পর্ক আছে এটি সত্যি সেক্স ভালোবাসারই একটি অংশ।


কিন্তু ভালোবাসা মানেই কি শুধুই সেক্স? কখনোই না।

ভালোবাসাকে শুধু সেক্সের নিকটে বেঁধে রাখে কিছু বনের পশু আমরা নিশ্চয়ই তা নই? কিন্তু পর্ন ভিডিও থেকে আমরা কি শিখছি? নো লাভ নো ইমোশন অনলি সেক্স! 

ভালোবাসা নিয়ে আমাদের উপলব্ধি আমাদের চেতনা সবকিছুই সংকীর্ণ করে ফেলেছে এই পর্নোগ্রাফি।


পর্ন আসক্তি ছেলেরা মেয়েদের কে সেক্স ডল হিসাবে দেখছে আর উঠতি বয়সের মেয়েরা পর্ন দেখে ভাবছে ছেলেদের কে আকৃষ্ট করার উপায় বুঝি শরীর দেখানো।


এভাবে গোটা জেনারেশন এর কাছে ভালোবাসার সম্পর্ক ই বদলে যাচ্ছে কি বেদনাদায়ক তাই না?


অনেকে হয়তো ভাবেন সিঙ্গেল আছি তাই পর্নোগ্রাফি দেখি বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে?

হ্যাঁ কারো কারো বেলায় ঠিক হয়ে যায় অবশ্য কিন্তু সবার বেলায় এমনটা ঘটে না, এমন অনেক দম্পতি আছেন যাদের একজনের পর্ন আসক্তির মাত্রা এত ই বেশি যে রিয়েল লাইফ সেক্সের প্রতি আগ্রহ নেই! সংগীত চেয়ে পর্দার পর্নস্টারের প্রতি আকর্ষণ বেশি দিনকে দিন এ সমস্যা বেড়েই চলেছে।


আপনার নিকটবর্তী কোন সাইক্লিস্ট এর সাথে কথা বলে দেখুন প্রতিনিয়ত এমন দম্পতিদের কে কাউন্সিলিং করে থাকে তারা।


পর্ন আসক্তিদের মধ্যে ডোনিকস্টিক ভায়োলেন্স এর মাত্র অসংখ্য জনক সম্প্রতি ইংল্যান্ডে ১২,৩২৩ জন পর্ন আসক্তির ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়।


 যারা এক্সট্রিম পর্ন দেখে তাদের মধ্যে স্বয়ংসতার প্রবণতা সাধারণের চাইতে অনেক বেশি! আর প্রায় ক্ষেত্রেই এই সহিংসতার শিকার হন তার ই পার্টনার। 


এর কারণ কিন্তু খুবই সিম্পল-

নিয়মিত পর্ন দেখলে মানুষ মস্তিষ্কে যে পরিবর্তন ঘটে তাতে ধৈর্য-সরণশীলতার আর আত্ম নিয়ন্ত্রণ নামতে থাকে একদম তলা নিতে ফলে যা হবার সেটিই হয়।


পুরুষ অঙ্গের উত্থান জনিত সমস্যাঃ

কলিকাতা হারবাল টাইম অসাধু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলোর পোস্টার এর প্রভাবে এই শব্দটি এখন মোটামুটি সবার কাছেই পরিচিত এখন।


ইলেকট্রিক্যাল ডিসফাক্সান নানা কারণে হতে পারে পর্ন আসক্তি তার মধ্যে একটি।


নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখে হস্তমৈথুন এর অভ্যাস হয়ে গেলে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাই পর্ন না দেখলে পুরুষাঙ্গ দাঁড়াচ্ছে না।


এমন অবস্থা কে বলা হয় পর্ন ইনডিউস ইলেক্ট্রিয়াল ডিসফাংশন এই যে কতটা ভয়াবহ তা বলাই বাহুল্য আর এই অবস্থায় একবার চলে গেলে পুনরায় স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসাও কঠিন।


পর্ন দেখা ছেড়ে দিলেও এসমস্যা দূর হতে কোন কোন ক্ষেত্রে বছরও লেগে যেতে পারে তবে আসার কথা হল পর্ন দেখা পুরোপুরি ছাড়তে পারলে সময়ের সাপেক্ষ হলেও এ থেকে পুরোপুরি সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব।


How to stop watching pron video পর্ন ভিডিও দেখা ছাড়ার উপায় কি?

তো প্রশ্ন হল ছাড়বো কিভাবে?

প্রথম কাজ হল দেখার মাধ্যম ই নষ্ট করা আপনার কাছে পর্নএর যত প্রকার সোর্স বা কালেকশন আছে তা পুরোপুরি ডিলিট বা নিশ্চিহ্ন করে ফেলুন। এমনিতে ও পর্নোগ্রাফি সংগ্রহ করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।


ভাবুন আপনার কিছু আছে কিনা যা আপনাকে পর্নোগ্রাফি দেখতে উপলব্ধি করছে থাকলে সেটি থেকে যথাযত দূরে থাকার চেষ্টা করুন। প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোন বা কম্পিউটার ব্যবহার কুমিয়ে ফেলার চেষ্টা করুন।


খেয়াল করুন আপনি কোন নির্দিষ্ট সময় পর্ন দেখেন কিনা এমনটা হলে ওই সময় একা একা থাকবেন না মানুষজনের মধ্যে থাকার চেষ্টা করুন।


অহেতুক রাত জাগার অভ্যাস থাকলে সেটি পরিত্যাগ করুন! রাত যত বাড়তে থাকে পুরুষের সেক্স চাহিদা ততই বাড়তে থাকে যা যৌন আকাঙ্খা সৃষ্টির জন্য দায়ী, আর এই জন্যই গভীর রাতে পর্নোগ্রাফি দেখার অভ্যাস থাকে অনেকের।


একটি নোটবুক কিনুন তাতে পর্ন দেখার ক্ষতিকারক দিকগুলো লাল কালি দিয়ে লিখুন নোটবুক টি যেন আপনার হাতের কাছেই থাকে তা নিশ্চিত করুন।


যখনই পর্নোগ্রাফি দেখার ইচ্ছা হবে নোটবুকটি খুলুন আর পড়তে থাকুন।


তাতে কাজ না হলে নির্জন জায়গা থেকে বেরিয়ে লোক জনের মধ্যে আসুন বন্ধুবান্ধব পরিবার-পরিজন এর সাথে সময় কাটান কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখবেন আপনি স্বাভাবিক হয়ে গেছেন।


সম্ভব হলে একান্ত কাছের কারো কাছে বিষয়টি শেয়ার করুন ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার চেষ্টা করুন।


প্রতিবার পর্নোগ্রাফি দেখার ইচ্ছা জাগার পর নিজেকে তা থেকে বিরত রাখতে পারলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।


নিজেই নিজেকে ট্রিট দিন ঘুরতে যান কোন ছোটখাটো গিফট কিনুন নিজের জন্য! এতে করে ধীরে ধীরে কনফিডেন্ট বুস্ট হবে আপনার যেটি যে কোন আসক্তি কাটাতে সবচাইতে বেশি দরকার নিজের ওপর আস্থা রাখুন! কখনো নিজেকে দমাতে না পারলে হতাশ না হয়ে পুনরায় দ্বিগুণ উদ্যমে শুরু করুন।

মনে রাখবেন যে আসক্তির বিরুদ্ধে লড়ছেন আপনি তা হিরোইন আসক্তির চেয়ে কম কিছু নাই যে যুদ্ধ আপনি শুরু করেছেন সেই যুদ্ধের যোদ্ধা আপনি একা নয়! আপনার মত লাখো মানুষ এই যুদ্ধে জয়ী হয়েছে আপনিও পারবেন শুধু প্রয়োজন অনেক চেষ্টা একাগ্রতা কঠোর প্রচেষ্টা। 

©Pocobd


Post a Comment

أحدث أقدم